'জাতিগত সুস্থতা' সম্পর্কে গণমাধ্যমে শিরোনাম করা হয়েছে
- আপলোড সময় : ১০-০২-২০২৫ ০৮:৪২:১৩ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১০-০২-২০২৫ ০৮:৪২:১৩ পূর্বাহ্ন
!['জাতিগত সুস্থতা' সম্পর্কে গণমাধ্যমে শিরোনাম করা হয়েছে 'জাতিগত সুস্থতা' সম্পর্কে গণমাধ্যমে শিরোনাম করা হয়েছে](https://sunamkantha.com/public/postimages/67a9678564dcb.jpeg)
“আমরা একটি সুস্থ জাতি দেখতে চাই : সেনাপ্রধান”। সংবাদবিবরণীতে লেখা হয়েছে, “সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, আমরা একটি সুস্থ জাতি দেখতে চাই। একটি সুস্থ জাতি পেলে দেশের জন্য বড় কাজে দেবে। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা আন্তর্জাতিক ম্যারাথন-২০২৫ এ তিনি এসব কথা বলেন।” প্রসঙ্গক্রমে জনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, “মিলিটারি একাডেমিতে এখন ক্যাডেট নেই। আগে যেমন সুস্থতা ছিল, এখন সে রকম পাই না। এর অন্যতম কারণ হলো, আজ-কাল তরুণরা শারীরিক কার্যকলাপে খুব বেশি সচেতন না। আগের মতো খেলার মাঠ নেই, দৌড়ঝাঁপও কমে গেছে। খেলাধুলায় সুযোগ-সুবিধাও কমে গেছে। এ জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, ম্যারাথনের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে সংযুক্ত করবো।”
আমরা সেনাপ্রধানের অভিমতের সঙ্গে অন্তত একটি ক্ষেত্রে একমত পোষণ করছি, সেটি হলো সুস্থতা। তাঁর বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে, তরুণসমাজের শারীরিক সুস্থতার স্বল্পতা কিংবা বেহাল দশা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন এবং তিনি ‘একটি সুস্থ জাতি’ দেখতে চান। আমরাও চাই। অর্থাৎ কতিপয় দুষ্ট মানুষ ছাড়া দেশের প্রতিটি মানুষই চান। অভিজ্ঞমহল মনে করেন, বিষয়টা অর্থাৎ এই চাওয়াটা যতো সহজ, বাস্তবে অর্জন করা ততোটই কঠিন। এই সুস্থতা ফিরে পেতে হলে বা সুস্থতার দ্বারপ্রান্তে যেতে হলে দেশটাকে একবারে পাল্টে দিতে হবে। যা একটি সামাজিক বিপ্লব ব্যতীত কীছুতেই সম্ভব নয়। আমাদের জাতিগত খাদ্যচক্রটিকে ইতোমধ্যে দূষিত করে দেওয়া হয়েছে, সেটাকে দূষণমুক্ত করতে হবে এবং তৎসঙ্গে বদলে দিতে হবে শিক্ষা ব্যবস্থাকে। তবেই স্বাস্থ্যে সুস্থতা ফিরে আসবে। বাণিজ্যিক শিক্ষা অর্থাৎ শিক্ষাকে দামি পণ্য করে তোলার ব্যবস্থা পরিহার করে শিক্ষার্থীর বইয়ের বোঝা কমাতে হবে, পাঠক্রমের অপরিণামদর্শী প্রসারতাকে সংকোচিত করে ব্যবহারিক জীবনে কাজে লাগে এমন এবং বেকারত্ব হ্রাসে সহায়ক হয় এমন পাঠক্রম শিক্ষার্থীদেরকে দিতে হবে। সোজা কথায় আনন্দময় পরিবেশে খেলাধুলা করানোর মাধ্যমেই শিক্ষা দিতে হবে শিক্ষার্থীকে। তৈরি করতে হবে ব্যাপক প্রসারিত কাজের ক্ষেত্র এবং তার অগে দিতে হবে খেলাধুলা করার মাঠ ও অবকাশ। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত আর্থসামাজিক বিন্যাসকাঠামোর বদৌলতে দেশজুড়ে সকল খেলাধুলার মাঠসহ অন্যান্য খোলা জায়গা সকলই ব্যক্তিগত সম্পত্তি মালিকানার বদৌলতে দখল করা হয়ে গেছে। খেলাধুলা করে সময় কাটানোর জায়গা নিয়েছে মুঠোফোনে আসক্তি এবং প্রকারান্তরে মুনাফা লুটছে বহুজাতিক বাণিজ্য সংস্থা। এই আন্তর্জালিক (ইন্টারনেট) মুগ্ধনিমগ্নতা থেকেও শিশু-কিশোর-তরুণদের রক্ষা করতে হবে, প্রতিপন্ন করতে হবে আন্তর্জাল নিজেকে নষ্ট করার জন্য নয়, নিজের ও সমাজের উন্নয়নের জন্যে, সার্বিক অর্থে জীবনের সুখ, সমৃদ্ধি, উৎকর্ষতা বাড়ানোর জন্যে। এইসব যদি করতে হয় তবে তো নয়া ঔপনিবেশিকতার ছাতার তলে বেড়ে উঠা বিদ্যমান আর্থসামাজিক বিন্যাসকাঠামোকে টিকিয়ে রাখলে চলবে না। কারণ বিদ্যমান এই বিন্যাসকাঠামোই প্রকারান্তরে তরুণসমাজের সুস্থতাকে গিলে খেয়েছে এবং এখনও খাচ্ছে, আমরা প্রতিরোধ করতে পারছি না এবং যথারীতি সেনাপ্রধানকে উদ্বিগ্ন হতে হচ্ছে।
কী করতে হবে তার নির্দেশনা ইতোমধ্যে অনেক দেওয়া হয়েছে, এখানে আপাতত তার বিবরণ দেওয়ার কোনও অবকাশ নেই। কিন্তু বেউপায় হয়ে বলতেই হচ্ছে যে, আমাদের সমাজের অধিপতি রাজনীতিক শ্রেণিসমাজ স্বশ্রেণিস্বার্থের বশবর্তী হয়ে সেটাকে উপেক্ষা কেবল নয় প্রকারান্তরে নিষ্ঠুর পদ্ধতিতে দমন করে আসছেন এবং শেষাবধি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন। এমন চলতে থাকলে কেবল তরুণসমাজকে নিয়ে নয়, সকল মানুষকে নিয়েই উদ্বিগ্নতা বাড়বে কখনওই কমবে না।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ